কলকাতা: কলকাতা সহ পাঁচ জেলায় গঙ্গার দুই পাড়েই ভাঙনের কারণ খুঁজে দেখতে রাজ্য সরকার একটি সমীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা এবং হাওড়া ও হুগলি জেলায় গঙ্গা তীরবর্তী মোট ১১৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই সমীক্ষা করা হবে। এই জেলাগুলিতে গঙ্গা ভাঙ্গনের প্রকোপ দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন পুরসভার কাছ থেকে এই মর্মে রিপোর্ট পাওয়ার পর সেচ দফতর এর কারণ খুঁজতে উদ্যোগী হয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করা হবে। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট দেখেই গঙ্গার পাড় রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। হুগলির ত্রিবেণী থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের গেঁওখালি পর্যন্ত প্রায় ১১৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গঙ্গা নদীর পাড়ে ভাঙনের কারণ জানতে বিশদে সেই সমীক্ষা হবে। গঙ্গার পাড় ভেঙে যে সব জায়গায় ভবিষ্যতে তলিয়ে যেতে পারে পারে, সেই এলাকাগুলি শনাক্ত করা হবে। হুগলি নদীর পাশাপাশি তার সংযোগকারী বিভিন্ন নদ-নদী ও খালের অবস্থাও সরেজমিনে খতিয়ে দেখা হবে। এই সব এলাকায় সারা বছর আবহাওয়া কেমন থাকে, তার ওপরও দৃষ্টিপাত করা হবে। খতিয়ে দেখা হবে গত ২৫ বছরের আবহাওয়ার রিপোর্টও।
গঙ্গার ভাঙন বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলার ছবি। সেখানে রাতারাতি কয়েক ঘন্টার মধ্যে ভাঙনের শিকার হয়ে সর্বহারা হন শয়ে শয়ে মানুষ। মালদা জেলার মানিকচক, কালিয়াচক-২, কালিয়াচক-৩ এবং মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কা, সামসেরগঞ্জ, সুতি-১, সুতি-২, রঘুনাথগঞ্জ-২, লালগোলা, ভগবানগোলা-১, ভগবানগোলা-২, রানীনগর-২ ও জলঙ্গি ব্লকগুলি ভাঙন কবলিত এলাকা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। গঙ্গা আর পদ্মা এই দুয়ের দাপটে সেই সব ব্লকে কয়েক লক্ষ মানুষ তাঁদের ভিটেমাটি, জমি, বাগান হারিয়ে রাস্তার ভিখারিতে পরিণত হয়েছে। সেই ভাঙন ঠেকাতে না কেন্দ্র সরকার কিছু করেছে, না ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন প্রদান বা ক্ষতিপূরণ প্রদানের কাজে কিছু করেছে। গত দেড়-দুই দশকে বিচ্ছিন্নভাবে কলকাতা সহ দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি জেলাতেও গঙ্গা নদীর দুই পাড়েই সেই ধরনের ভাঙন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই সব ভাঙন শুধু বেড়েই চলেছে তাই নয়, তা নিঃশব্দে পায়ের নীচে মাটি কেড়ে নিচ্ছে গ্রামের পাশাপাশি শহর এলাকাতেও। আর সেই সূত্রেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে গঙ্গার তীরবর্তী কলকাতা সহ দুই ২৪ পরগনা এবং হাওড়া ও হুগলি জেলার জনপদগুলি, শহরগুলিকতখানি নিরাপদ!কার্যত কলকাতা এবং তার আশপাশের শহরাঞ্চলে যে ভাবে গঙ্গার পাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে বিপদের গন্ধ পাচ্ছে নবান্ন। বিশেষজ্ঞরাও বার বার সতর্ক করছেন যে, নদীর পাড় ভেঙে গঙ্গার জল কলকাতা শহরে ঢুকে পড়বে যে কোনও মুহুর্তে। আর তাই সময় ব্যয় না করে গঙ্গার পাড় ভাঙার কারণ খুঁজে বের করতে উদ্যোগী হল রাজ্য।